উত্তরপ্রদেশের এক চিড়িয়াখানাই তার মানুষ বন্ধু আরিফের অপেক্ষা করতে করতে মারা গেলো সেই সারস পাখি যার বন্ধুত্ব কয়েক মাস থেকেই ইন্টারনেটে হইচই তুলেছে।
আজ আমি আপনাদেরকে এমন এক বন্ধুত্বের গল্প শোনাবো যা শুনলে আপনিও চোখের জল ধরে রাখতে পারবেন না। ঘটনাটি কয়েক মাসের আগের, উত্তরপ্রদেশের আমিঠির যুবক আরিফ মোহাম্মদ একদিন তার বাড়ির পাশের ক্ষেতে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন।
হঠাৎ তিনি দেখতে পান একটি সারস পাখি রক্তাক্ত অবস্থায় মাঠে পড়ে আছে। এরপরে তিনি সেই পাখিটিকে তুলে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান এবং এরপর কয়েকদিন ধরে সেবাশ্রুষা করার পরে সারসটি সুস্থ হয়ে ওঠে। তখন, আরিফ মনস্থির করেন পাখিটিকে বনে ছেড়ে দেওয়া উচিত। সেই মতো তিনি বাড়ির পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে জয়েন করুন | টেলিগ্রাম লিঙ্ক |
কিন্তু ততদিনে সারসটি আরিফের মধ্যে তার নিজের আসল বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছে। অনেক বার চেষ্টা করার পরেও যখন সারসটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিতে অসমর্থ হন, তারপর থেকেই সারসটি আরিফের সাথেই থেকে যায়। খাওয়ার সময় আরিফের থালার এক পাশ থেকেই খবর নিয়ে খায়।
মানুষ ও সারসের এরূপ বন্ধুত্ব দেখে রীতিমত ভাইরাল হয়ে যায় সেই ঘটনা। আশেপাশের এলাকার লোক সেই বন্ধুত্বের সাক্ষী হতে চলে আসেন। সারা দেশ থেকে জাতীয় টিভি চ্যানেল গুলো এসেও এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন।এমনকি উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত নেতা অখিলেশ যাদব ও সেই সারসটির সাথে দেখা করতে আসেন।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে কিছুদিন পরেই, যখন এই ঘটনা উত্তরপ্রদশের বনবিভাগের নজরে পড়ে। যেহেতু সারস একটি বন্যপ্রাণী এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ভারতে বন্যপ্রাণী পোষা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বন্যোদপ্তরের আধিকারিকরা সারস পাখিটিকে নিজের বাড়িতে রাখার জন্য আরিফ কে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সারসটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যও অনেক বেগ পেতে হয় বনদপ্তরের কর্মীদের।
অবশেষে, পাখিটিকে চিড়িয়াখনায় নিয়ে গিয়ে আইসোলেশনে রাখা হয়। চিড়িয়াখানাই আনার দুদিন পর শুধুমাত্র কিছু সেদ্ধ আলু আর কিছু ছোট মাছ ছাড়া আর কিছু মুখে দেয়নি সারসটি। এরপর থেকেই পাখিটির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। কাছের মানুষকে দেখতে না পাওয়ার দুঃখে পাখিটি খাওয়া ছেড়ে দেয়। ডাক্তারদের পরামর্শ মতো বিভিন্ন রকমের খবর দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও খাওয়াতে পারে না।
শেষে উত্তরপ্রদেশের বিধায়ক অমিতাভ অগ্নিহত্রীর পরামর্শ মতো, আরিফের একটি ফটো সেই পাখির সামনে রাখা হলে, কিছুটা হলেও খাওয়ানো সম্ভব হয়। চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ দেখেন আরিফের ছবি দেখে কিছুটা হলেও খুশি হয়েছে সারস পাখিটি।
চিড়িয়াখানার ডাইরেক্টর কে কে সিং জানান, সারস পাখিটির নজর রাখার জন্য তিনজন চিকিৎসক রাখা হয়েছিল। এবং তার জন্য স্পেশাল ডায়েটও রাখা হয়েছিল। কিন্তু বেশ কয়েকদিন এভাবে রাখার পর, একদিন সকালে উঠে চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ দেখেন সারস পাখিটি মরে পড়ে আছে।
এরপর, আরিফকে চিড়িয়াখানাই নিয়ে যাওয়া হলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কেউ কী ভেবেছেন, একটি মানুষ একটি সাধারণ পাখির জন্য কাঁদবে আর একটি পাখি একটি সাধারণ মানুষের জন্য খাওয়া ছেড়ে দিবে? শেষ পর্যন্ত বন্ধুর দেখা না পেয়ে মারা যায় সেই অসহায় পাখিটি।
এই ঘটনাই আমাদের শিক্ষা দেয়, ভালোবাসার কোন ডেফিনেশন হয় না। এই জন্যই আমরা অনুরোধ করি, হোক সে মানুষ বা পশু, বন্ধুত্ব একটি অমূল্য রত্ন।এমন কোন কাজ করবেন না যা বন্ধুত্বের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়।